চেনা পথ ঘুরে যায়
ঘুরে যায় হাওয়া
এখনই কি ঠিক হবে
তোর বাড়ি যাওয়া
গোলাপ পাপড়ি ঠোঁট
চায়েতে চুমুক
দাঁড়া মেয়ে মেঘমালা
বিষ্টি নামুক
পড়শির বাঁকা চোখ
হোক আগে বাসি
এখনই দিবি না চিঠি
ভালোবাসাবাসি
রোদ এসে মেপে নিক
কার ছায়া বড়
তারপর খেল তুই
কাটাকুটি আরো
আমি কি প্রথম তোর
নাকি দুই তিন
কক্ষনো বলবি না
উপহার নিন
স্বখাত সলিলে আমি
বাসি ছেঁড়া ফুল
মেয়ে তুই আর কোনো
করবিনা ভুল।
---এই কবিতার শিরোনাম বিষ্টি নামুক । শুধু এই কবিতাটিই কি তার পরিচয় ? তাহলে কবিকে চিনতে ভুল হবে। আসুন, আরেকটি পড়ি--
হাত
হাত বাড়ালে বন্ধু সুজন
হাত বাড়ালে হাত,
হাত বাড়ালে আরশি নগর
পড়শিরা দিন রাত।
হাত বাড়ালে বৃষ্টি নামে
জল ছুঁয়ে যায় মন,
হাত বাড়ালে বুকের ভিতর
বৃষ্টি সারাক্ষণ।
হাত বাড়ালে খুনিও জানি
পাল্টে ফেলে পথ,
হাত বাড়ালে আঁধার খোঁজে
আলোর গৌরব।
হাত বাড়ালে পাহাড় টলে
হাত বাড়ালে হাত,
হাত বাড়ালে ভাগ করে খাই
এক থালা ফ্যান ভাত।
--এমনি করে কখনও প্রেম, কখন ও আশা, বেদনা, রাগ, অভিমান মুক্তি পেয়েছে কবি সাধন বারিকের লেখায়। দক্ষিন চব্বিশ পরগণা জেলার রাজারহাটের কাছে চাঁদপুর গ্রামে ১৩৫৯ বঙ্গাব্দের ৬ আষাঢ় তাঁর জন্ম। বাবার হাতটি ধরে দশ বছর বয়সে সেই যে আরামবাগে এলেন, এতগুলো বছর কাটাচ্ছেন এখানেই। না, এক জায়গায় স্থিতু হবার অভ্যাস তাঁর নেই। আজ যদি শান্তিনিকেতনের আদিবাসীপল্লীতে, তো কাল পুরুলিয়ায় বনবাসী মানুষের কাছে। চরাচরজুড়ে তাঁর এই ছুটে চলায় লাভবান হয়েছেন তাঁর শ্রোতারা, যাঁরা তাঁর কবিতা শুনতে শুনতে তাঁকে চিনেছেন এবং ভালবেসেছেন। শ্রোতাদের কথা বলছি এ কারনে যে কবি প্রায় আট হাজার কবিতা লিখলেও বই এর সংখ্যা মাত্র একটি। তাও তাঁর গুণগ্রাহীদের বদান্যতায় প্রকাশিত।বাকী কবিতার বেশীরভাগই অযত্নে, অবহেলায় হারিয়েছে কালের অতলে। তাতে কবির ভারি বয়েই গেছে। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কোথায় তার ! অথচ প্রাসঙ্গিক যে কোন ঘটনা তাঁকে ছুঁয়ে যায়। তা জেনে, সন্ধানী পত্র পত্রিকার সম্পাদককূল হাজির হন তাঁর কাছে। তাঁদের আব্দারে পঁচিশে বৈশাখ স্মরণে তিনি লিখেছেন-
মন পাগলের ছেঁড়া পাতায়
যেই বসলেন রবি
এক নিমেষে উধাও হলো
অন্ধকারের ছবি
অন্ধকারের বন্ধ দ্বারে
হাজার আলোর ডাক
এখন আমার প্রতিটি দিন
পঁচিশে বৈশাখ।
আবার সমাজসচেতন বিবেক তাঁকে দাঁড় করিয়েছে মানুষের মুখোমুখি। বিবাদের কষ্ট উন্মুক্ত করেছেন এই বলে-
বাঘ দিয়েছে বাঘের মতো
কাঁটা তারের বেড়া
এই পারেতে গাধা আমি
ওই পারে তুই ভেড়া।
বাঘের হালুম সব কেড়ে নেয়
গাধার লাগে ভয়
দৈনিকে রোজ বাঘেরা দেয়
বেড়ার সমন্বয়
বেড়ার আমি বেড়ার তুমি
বেড়ার জন্য বেড়া
সেই কথাটা বুঝবে কবে
গাধা এবং ভেড়া।
মানুষ আর কবিতার প্রতি তাঁর এই মমত্ববোধ তাঁর সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে অন্নদাশঙ্কর রায়, বীরেন চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় - এর মতো কালজয়ী লেখকদের। তাঁদের অনেকেই সাধন বারিকের নিজের প্রকাশিত আলিঙ্গন পত্রিকায় লিখেছেন।কবি নিজের পত্রিকা ছাড়াও নিয়মিত লিখেছেন শুকতারা, সন্দেশ, আনন্দবাজার, যুগান্তর, বসুমতী-র মতো কাগজে বলে লাজুক হেসে জানালেন।এতো সবের মাঝে কবি কেবলই আনমনা হয়ে পড়েন রামকিঙ্কর বেইজের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে সময় কাটানোর কথা বলতে, বলতে।এই শান্তিনিকেতনেই চালচুলোহীন কবিকে ভালবেসে মালা দিয়েছিলেন কবির গৃহিনী কেয়াদেবী। আজও আগলে রেখেছেন বাউল মনের মানুষটিকে।
আয় নেই, লেখা প্রকাশ হলেও অর্থ পাবার নিশ্চয়তা নেই, তবু ফেরাননি কাউকেই। লেখার কাগজ না থাকলে ঠোঙার সাদা অংশে লেখে দিয়েছেন মনিমুক্তোর মতো অজস্র কবিতা। তাঁর ভাগ্যে জোটে নি কোন পুরস্কার। যাঁর সে রকম কোন বইই নেই, কে তাঁকে দেবেন পুরস্কার? প্রচারবিমুখতার জন্য প্রকাশরাও খোঁজ পাননি তাঁর। আর পেলেই বা কি ? তাঁর তো কোন ঠিকানাই ছিল না নির্দিষ্ট করে। নতুন একজন মানুষ যে যুক্ত হয়েছেন তাঁর জীবনে, সে কথা ভাবতে ভারী বয়ে গেছে তাঁর।
কিন্তু আরামবাগ তাঁকে ফেরায় নি। কবির সৃষ্টি নজরে পড়েছে আরামবাগ শহরের দরদী মানুষদের। শহরের বুকে অত্যন্ত একটি মূল্যবান জায়গা কবিকে ভবানী দত্ত বলে এক গুণগ্রাহী দান করেছেন। অগণিত মানুষের দানে নির্মিত হয়েছে তাঁর ছোট্ট বাসা।কবিপত্নী যতই তাঁকে ভালবাসা দিয়ে ধরে রাখতে চান, কবি সে বাঁধন আল্ গা করে বারে বারে ছুটে যান প্রান্তিক মানুষের কাছে। সেখানেই তাঁর মুক্তি, তাঁর আনন্দ। আনন্দধারায় স্নাত কবি আশা করেন-
পর্দাবিহীন জানালায় সেই মুখ
শত বরষায় ভেজা, ভেজা চোখ দুটি
শুধু আমারই বেদনায় উৎসুক
আমি চাই এক ঠিকানাবিহীন পথ
কাব্যের কুঁড়ি ফোটাবে নদীটি এসে
আমি চাই সেই চাল ধোয়া দুই হাত
মৌন এ বুক ছুঁয়ে যাবে ভালবেসে
আমি চাই আজ চাঁদের আগুনে পুড়ে
আমি চাই আজ আবার আসুক ফিরে
সাত ও আটের ঝরে যাওয়া ফুলগুলি
আমি চাই আজ পতাকার রঙে নয়
উঠোন খামারে সেদিনের মতো যেন
বন্ধুর পা ফিরে আসে নির্ভয়ে।
If you have any difficulty to see Bengali font, you may download Bengali Unicode Software after observing all formalities.
Poet Sadhan Barik deserves appreciation for his spontaneous writing.
ReplyDelete